অনলাইন ডেস্ক : দীর্ঘ সাড়ে ৬ বছর পর যুক্তরাজ্য যাচ্ছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে ‘ওয়ান টু ওয়ান’ বৈঠক করবেন তিনি। স্ত্রী রাহাত আরা বেগমসহ শনিবার (৩০ নভেম্বর) সকালে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন বিএনপি মহাসচিব। সেখানে তারা ১০ দিন অবস্থান করবেন।
সর্বশেষ ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তিনি দুইবার লন্ডন গিয়েছিলেন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতন ও রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এবারই প্রথম সরাসরি লন্ডনে যাচ্ছেন মির্জা ফখরুল। মূলত বিএনপির শীর্ষ দুই নেতার আগ্রহে দলীয় এবং রাজনৈতিক কাজে লন্ডন সফরে যাচ্ছেন বিএনপি মহাসচিব। এরই মধ্যে তাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি সভাও করেছে যুক্তরাজ্য বিএনপি। তার সম্মানে কয়েকটি কর্মসূচিও করার কথা রয়েছে।
বিএনপির সূত্রগুলো বলছে , দেশের চলমান পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ চারটি ইস্যুতে যুক্তরাজ্য যাচ্ছেন বিএনপি মহাসচিব। এগুলো হচ্ছে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন, সব দলের মতামতের ভিত্তিতে প্রণীত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখাকে অধিকতর প্রচারণা ও কার্যকর করা এবং চলমান পরিস্থিতিতে বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে আরও গতিশীল করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা।
বিএনপির নেতারা বলছেন, এগুলোই এখন দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে পর বিএনপিসহ বিরোধী দলের বিরুদ্ধে দমনপীড়নের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পায়। ফলে তৎকালীন সরকারের দমননীতির কারণে বিদেশে যেতে পারেননি মির্জা ফখরুল। পাশাপাশি একাধিকবার কারাবরণসহ নানা কারণে বিদেশে যেতে পারেননি। যে কারণে তারেক রহমানের সঙ্গে সরাসরি দেখা হয়নি তার।
বিএনপির কয়েকজন নেতা জানান, বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে স্থিতিশীল থাকলেও তার দ্রুত উন্নত চিকিৎসা দরকার, এটা সত্য। তার অবর্তমানে দলের ভেতরে কোনো সংকট তৈরি হয় কি না, সেটিও ভাবনার বিষয়। আবার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন মামলা দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি মামলায় তার বিরুদ্ধে রায় হিসেবে সাজাও দেওয়া হয়েছে। অবশ্য ৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনের পর এরই মধ্যে কয়েকটি মামলায় তিনি খালাসও পেয়েছেন। এখন তিনি কবে নাগাদ দেশে ফিরবেন, তা-ও নিশ্চিত নয়।
পাশাপাশি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সব দলের মতামতের ভিত্তিতে প্রণীত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখাকে অধিকতর প্রচারণা ও কার্যকর করা অত্যাবশ্যক। একই সঙ্গে নানা কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। চলমান পরিস্থিতিতে বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে আরও গতিশীল করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব কারণেই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের যুক্তরাজ্য সফরটি গুরুত্বপূর্ণ।
বিএনপি সূত্র জানায়, বিএনপি মহাসচিব দেশে ফেরার পর দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য লন্ডন যেতে পারেন ১৩ ডিসেম্বর। সেজন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া প্রথমে যুক্তরাজ্যে চিকিৎসা করাবেন। এরপর সেখান থেকে চিকিৎসার জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রেও যেতে পারেন। আমেরিকার ভিসার জন্য গত বুধবার ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে গিয়ে ফিঙ্গার প্রিন্টও দিয়েছেন খালেদা জিয়া।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমদ জানান, তারা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে স্বাগত জানাতে সকালে বিমানবন্দরে যাবেন। যুক্তরাজ্য বিএনপির উদ্যোগে আগামী ৩ ডিসেম্বর বিকেলে রয়েল রিজেন্সিতে ‘বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবসের তাৎপর্য ও সাম্প্রতিক বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সূত্র, অনুপম নিউজ