ঢাকা   ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
ভারত থেকে আবারও এক হাজার ৯০০ মেট্রিক টন আলু আমদানি ভারতের ট্যুরিস্ট ও বিজনেস ভিসা বন্ধ, বেনাপোল বন্দর দিয়ে যাত্রী পারপার অর্ধেকের নিচে অন্তর্বর্তী সরকারই তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রূপান্তরিত হতে পারে: অ্যাটর্নি জেনারেল মৌলভীবাজার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মৌলভীবাজার স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পন করে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে সর্বস্তরের মানুষের ঢল। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা পুলিশ সদস্য এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সম্মাননা। রাজারবাগ পুলিশ স্মৃতিসৌধে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদন। বর্ণীল আয়োজনে শার্শা প্রশাসনের বিজয় দিবস উদযাপন ভারত থেকে শুল্কমুক্ত চাল আসলেও বাজারে কোনো প্রভাব নেই। যশোরের শার্শায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

ভালো নেই লোকসংগীতশিল্পী কাঙালিনী সুফিয়া

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ডিসেম্বর ১৮, ২০২৩
  • 85 Time View

বিজনেস ফাইল ডেস্ক
‘আর কত দিন থাকব আমি এই হালে রে, আমার কানতে কানতে জনম গেল রে…।’
তাৎক্ষণিক নতুন একটি গান বানিয়ে শোনাতে পাঁচ মিনিট সময় চেয়েছিলেন লোকসংগীতশিল্পী কাঙালিনী সুফিয়া। বেঁধে ফেললেন সেই গান। একটু পর গাইতেও শুরু করলেন। গানের কথাগুলো যে কাঙালিনী সুফিয়ার বর্তমান সময়ের প্রতিচ্ছবি, তা বুঝতে খুব বেশি সময় লাগেনি। গান শোনা শেষে কথা হয় এই শিল্পীর সঙ্গে। বর্তমানে তাঁর করুণ দশার চিত্র উঠে আসে আলোচনায়।
একটা সময়ে দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ছুটে গেছেন গান নিয়ে। গানের কথা ও সূরের মূর্ছনায় মাতিয়েছেন শ্রোতাদের। দেশের বাইরে রয়েছে তাঁর অসংখ্য ভক্ত। তাঁদের অনুরোধে একাধিকবার বিভিন্ন দেশের নানা অনুষ্ঠানে গান গেয়েছেন। সবার ভালোবাসায় পেয়েছেন দেশি ও আন্তর্জাতিক অনেক পুরস্কার ও স্বীকৃতি।

গানের জগতে ডুবে থাকা মানুষটা ভালো নেই। কয়েক বছর ধরেই চলছে সংসারে আর্থিক টানাপোড়েন। শারীরিক অসুস্থতাও আছে। ধারদেনায় চলছে লোকগানের এই শিল্পীর সংসার। দেনা মেটাতে সম্প্রতি বিক্রি করে দিয়েছেন সাভারের পূর্ব জামসিং এলাকার ভিটেমাটিসহ বাড়িটি।

বাড়ি বিক্রির টাকায় দেনা মিটিয়ে উত্তর জামসিংয়ে কিনেছেন ৩ শতাংশ জমি। নতুন করে সেখানে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে বাড়ি করার মতো টাকা নেই তাঁর। এতে তৈরি হয়েছে নতুন সংকট। ভাড়া বাসায় উঠতে হবে তাঁকে। প্রতি মাসের বাসা ভাড়া নিয়ে চিন্তিত কাঙালিনী সুফিয়ার পরিবার।
গত বুধবার সকালে তাঁর বাসায় গিয়ে দেখা যায়, জীর্ণ একটি কক্ষে খাটের ওপর জড়সড় হয়ে বসে আছেন কাঙালিনী সুফিয়া। এই প্রতিবেদকের আসার খবরে খাট থেকে নেমে বারান্দায় আসেন। পরিচয় জানার আগেই গাওয়া শুরু করেন, ‘আমার দেহ চলে না রে দয়াল…।’
পরে ওই কক্ষে বসে কথা হয় কাঙালিনী সুফিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, কয়েক বছর ধরে দুঃসময় পার করছেন। একটা সময় অনেকে খোঁজ নিলেও এখন আর কেউ খোঁজ নেয় না। গানের অনুষ্ঠানেও তেমন ডাকা হয় না তাঁকে। অভাব–অনটনের মধ্য দিয়ে চলছে সংসার।

২০২০ সালের পর থেকে অসুস্থ থাকায় চিকিৎসার জন্য ধার করা ১৫ লাখ টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে সাভারের শেষ সম্বল জমিসহ বাড়িটি সম্প্রতি বিক্রি করে দিতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দেওয়া প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা দিয়ে কোনোমতে চলছে তাঁর সংসার। এখনো তিনি গান গাইতে পারেন, তাই সবাইকে গানের অনুষ্ঠানে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানোর অনুরোধ জানালেন।

কাঙালিনী সুফিয়া বলেন, ‘এখনো আমি গান গাাইতে পারি। কারও কাছে হাত পাততে চাই না। আমি গান গাইতে চাই। আপনারা আমাকে গান গাওয়ার জন্য নেন। অসুস্থতার সময় ঋণ করে নেওয়া টাকা ফেরত দিতে বাড়ি বিক্রি করে দিছি। অন্য জায়গায় একটু জমি কিনছি। কিন্তু ঘর তোলার টাকা নাই। কেউ যদি তিন গাড়ি ইট দিত, তাহলেও ঘর তুলে কোনোমতে থাকতে পারতাম। এখন বাসাভাড়া নিয়ে থাকতে হবে। বাসাভাড়ার টাকা কই পাব? প্রধানমন্ত্রী প্রতি মাসে ১০ হাজার করে টাকা দেন, আর আশপাশে দুই–একটা গানের অনুষ্ঠান করে যে টাকা পাই, ওটা দিয়ে কোনোমতে চলতেছি।’
গানের অনুষ্ঠানে মা কাঙালিনী সুফিয়া গান করেন আর মেয়ে পুষ্প বেগম মায়ের সঙ্গে থেকে মন্দিরা বাজান। মায়ের অসুস্থতা ও সামনের দিনগুলো নিয়ে বেশ চিন্তিত তিনি। পুষ্প বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মায়ের আয় দিয়েই চলে সংসার। আমার স্বামী গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে প্যারালাইজড। একদিকে তাঁর চিকিৎসা, অপরদিকে মা দীর্ঘদিন ধরে কিডনি, হার্টের সমস্যায় ভুগছেন। টাকার অভাবে দুইজনের ওষুধ নিয়মিত কিনতে পরছি না। ঋণ পরিশোধ করতে থাকার জায়গাটাও বিক্রি করা হয়েছে। বাসাভাড়া করে কীভাবে চলব জানি না।’

বর্তমান রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার রামদিয়া গ্রামে জেলে পরিবারে কাঙালিনী সুফিয়ার জন্ম। তাঁর প্রকৃত নাম টুনি হালদার। ১৪ বছর বয়সেই গ্রামের অনুষ্ঠানে গান গেয়ে মানুষের নজর কাড়েন। একসময় তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনেরও নিয়মিত শিল্পী ছিলেন। তাঁর গানের গুরু গৌর মহন্ত ও দেবেন খ্যাপা।

হালিম বয়াতির কাছেও গান শিখেছিলেন। এ পর্যন্ত ৩০টি জাতীয় ও ১০টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন। ‘কোনবা পথে নিতাইগঞ্জ যাই’, ‘বুড়ি হইলাম তোর কারণে’, ‘নারীর কাছে কেউ যায় না’, ‘আমার ভাটি গাঙের নাইয়া’সহ বেশ কিছু জনপ্রিয় গানের শিল্পী তিনি।

কাঙালিনী সুফিয়াকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাঙালিনী সুফিয়াকে সহযোগিতা করার বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে আন্তরিকতার কোনো অভাব থাকবে না। এটি আমাদের নৈতিক দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। তিনি বা তাঁর পরিবারের কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

কাঙালিনী সুফিয়ার সঙ্গে কথা বলার সময় পাশের কক্ষ থেকে কুকুরের ডাক শোনা যাচ্ছিল। জানান, কুকুরটিকে নিজের সন্তানের মতোই ভালোবাসেন তিনি। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মনে পড়ে কক্ষে থাকা সেই কুকুর নিয়ে কাঙালিনী সুফিয়ার কথা। কুকুরের ডাক শুনতে পেয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘আহা রে, ওরে ঘরে আটকাইয়া রাখছে। ওরে ছেড়ে দাও, বাইরে থেকে ঘুইরা আসুক।’

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

আধুনিক চক্ষু হাসপাতাল, শমসের নগর রোড, মৌলভীবাজার

© All rights reserved © 2018 News Smart
Develoved by Bongshai IT