ঢাকা   ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
ভারত থেকে আবারও এক হাজার ৯০০ মেট্রিক টন আলু আমদানি ভারতের ট্যুরিস্ট ও বিজনেস ভিসা বন্ধ, বেনাপোল বন্দর দিয়ে যাত্রী পারপার অর্ধেকের নিচে অন্তর্বর্তী সরকারই তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রূপান্তরিত হতে পারে: অ্যাটর্নি জেনারেল মৌলভীবাজার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মৌলভীবাজার স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পন করে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে সর্বস্তরের মানুষের ঢল। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা পুলিশ সদস্য এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সম্মাননা। রাজারবাগ পুলিশ স্মৃতিসৌধে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদন। বর্ণীল আয়োজনে শার্শা প্রশাসনের বিজয় দিবস উদযাপন ভারত থেকে শুল্কমুক্ত চাল আসলেও বাজারে কোনো প্রভাব নেই। যশোরের শার্শায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

বেশি দামে আলু বিক্রি করতে দোকানিদের কৌশল

বিবিসি বাংলা
  • Update Time : বুধবার, অক্টোবর ২১, ২০২০
  • 108 Time View
আলু

বাংলাদেশে বেশ কয়েক দিন ধরেই দফায় দফায় আলুর দাম বাড়ার পর সেটি এখন দাঁড়িয়েছে কেজি প্রতি ৫০ টাকায়। তবে সরকার থেকে আলুর দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে আরো কম। যার কারণে খুচরা বাজারগুলোতে আলুর মতো সবজিও বিক্রি হচ্ছে নানা কৌশলে।

অনেক দোকানি বলছেন, দাম বাড়ায় আলু বিক্রি বন্ধ করেছেন তারা। তবে অনেকে আবার ঝুড়িতে আলু না রাখলেও ক্রেতা চাইলে বিক্রি করছেন বাড়তি দামে।

রাজধানী ঢাকার মহাখালী কাঁচাবাজারে গেলে সবজির দোকানগুলোতে থরে থরে কাচা সবজি সাজিয়ে রাখাটা চোখে পড়ে। শুরুর দিকের কয়েকটি দোকান ঘুরে অন্যসব সবজি চোখে পড়লেও দেখা যায় না আলুর কোন পসরা।

আলু দেখতে না পেয়ে এক দোকানিকে জিজ্ঞেস করেছিলাম আলু আছে কিনা? তিনি কোন উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন কয় কেজি লাগবে? তিনি বললেন, আলু সাজানো না থাকলেও দেয়া যাবে। দাম কত জানতে চাইলে বললেন ৪৮-৫০ টাকা প্রতি কেজি।

সাংবাদিক পরিচয় জানার পর তিনি আবার তার বক্তব্য পাল্টে ফেলেন এবং আলু বিক্রি করতে অসম্মতি জানান। বলেন, দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে আলু বিক্রি করছেন না তিনি।

“আলু সরকার রেট দেয়ার আগে বিক্রি করছি ৪৫-৫০ টাকা কেজি। সরকার যে রেট দিছে তার পর থেকে আলু বিক্রি করতে হয় লস দিয়ে ৩০ টাকা কেজিতে। মার্কেটে কেনা পরে আরো বেশি, ৪০-৪২ টাকা। তাই আপাতত আলু বিক্রি বন্ধ রাখছি,” বলেন ওই দোকানি।

তিনি অভিযোগ করেন, আলুর দাম বাড়িয়েছে আড়ৎদার আর পাইকারি দোকানদাররা। তিনি বলেন, হিমাগারে আলুর পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও মজুদদারেরা সেগুলো বের করছে না। ফলে আলুর দাম বাড়ছে।

বাজারের একটু ভেতরে গেলে কয়েকটি দোকানে আলু সাজিয়ে রাখতে দেখা যায়। তবে পরিমাণে খুবই কম। দাম জিজ্ঞেস করলে তারা জানান, ৪৫-৫০ টাকায় আলু বিক্রি করছেন তারা।

খুচরা সবজি ব্যবসায়ী মীর ফয়েজ জানান, আগে কয়েক ধরণের আলু বিক্রি করলেও এখন মাত্র এক ধরণের আলু বিক্রি করছেন আর সেটিও খুব কম পরিমাণে।

“আলুর দাম যদি ২৫-৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৫-৫০ টাকা হয়, তাহলে সেটা বেশি না? কাস্টোমাররা মন খারাপ করে বেশি দাম রাখলে। তাই আলু বেচা কমিয়ে দিছি,” বলেন মীর ফয়েজ।

বাজারে ঘুরতে ঘুরতে কথা হয় সাইদুর রহমান নামে এক ক্রেতার সাথে। আলু কিনেছেন তিনি। তবে ৩০ কিংবা ৫০ টাকায় নয়। বরং প্রতি কেজি আলু ৬০ টাকা দরে কিনতে হয়েছে তাকে।

“৬০ টাকায় কিনেছি কারণ বাজারে তেমন যোগান নেই। আর কম দামে কেউ দেয় না।”

আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে এর আগে এক দফা দাম নির্ধারণ করেছিল কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। তখন হিমাগারে থাকা আলু ২৩ টাকা, পাইকারি ২৮ টাকা এবং খুচরা বাজারে ৩০ টাকা দাম নির্ধারিত হয়েছিল।

কিন্তু সেটি নিয়ে ব্যবসায়ীদের আপত্তির মুখে মঙ্গলবার আরেক দফা বৈঠক করে সংস্থাটি। যেখানে কৃষক, ব্যবসায়ী, আড়ৎদার এবং কৃষি অর্থনীতিবিদদের সাথে আলোচনার পর, দাম বাড়িয়ে নতুন করে আরেক দফা আলুর দাম নির্ধারণের ঘোষণা দেয়া হয়।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, আলু উৎপাদন ও ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ট কারো যাতে ক্ষতি না হয় সেটি মাথায় রেখে খুচরা বাজারে আলুর দাম ৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এছাড়া হিমাগারের আলু ২৫ টাকা এবং পাইকারি বাজারে ৩০ টাকা দরে দাম নির্ধারণ করা হয়।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, আলু উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের সাথে যারা জড়িত তাদের যাতে ক্ষতি না হয় সে বিষয়টি মাথায় রেখে এবার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন এই দাম মঙ্গলবার থেকেই কার্যকর করা হবে। কেউ এই নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি না করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

আলুর মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় সাধারণ একটি সবজির দাম হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া এবং সেটি বিক্রি নিয়ে নানা ধরণের কৌশল ব্যবহারের মতো পরিস্থিতি কেন সৃষ্টি হলো এমন প্রশ্নের জবাবে কৃষি অর্থনীতিবিদরা বলছেন, একদিকে যেমন যোগানের একটি ঘাটতি তৈরি হয়েছে, ঠিক তেমনি অন্যদিকে, সরকার যে দাম নির্ধারণ করছে তা অনেক ক্ষেত্রে বাস্তব সম্মত হয়নি।

যার কারণে এমন পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

আলুর মূল্য নির্ধারণের যে প্রক্রিয়া বা যেভাবে মূল্য নির্ধারিত হয়েছে সেটি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বাজারে মূল্যের সাথে সমন্বয় করা বা কোল্ড স্টোরেজে রাখার খরচ এবং কৃষকের কাছ থেকে কি মূল্যে কেনা হয়েছিল সে বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া দরকার ছিল বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, বাজারে পণ্যের সরবরাহের ক্ষেত্রে যেহেতু সরকারের নিয়ন্ত্রণ কম, সুতরাং মূল্য নির্ধারণ করে দিলেই যে আসলে সেই মূল্যে পণ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করা যাবে সেরকমটা নয়। যার কারণে এ ধরণের একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

কৃষি অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, ভবিষ্যতে এ ধরণের পরিস্থিতি এড়াতে হলে জরুরি খাদ্য পণ্যের সাপ্লাই চেইনের সাথে যারা জড়িত অর্থাৎ উৎপাদক, ব্যবসায়ী, আড়ৎদার- এদের সবাইকে একটি রেজিস্টার ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে হবে। যাতে করে পণ্যের উৎপাদন ও মজুদ সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য থাকে এবং সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, চালের দামের ক্ষেত্রে সরকারের একটি কমিটি রয়েছে। সেরকম কমিটি জরুরি প্রয়োজনীয় আরো ১৭টি পণ্যের ক্ষেত্রেও থাকতে হবে। যারা বাজার বিশ্লেষণ করবে, উৎপাদন বিশ্লেষণ করবে, সেই সাথে ভোক্তাদের চাহিদা বিশ্লেষণ করবে, যেসব দেশ থেকে আমদানি করা হয় সেসব দেশে উৎপাদনের কি অবস্থা সে বিষয়গুলোও বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

“এই সিদ্ধান্ত হবে যে, আমদানি কমাতে হবে নাকি বাড়াতে হবে, শুল্ক কমাতে হবে নাকি বাড়াতে হবে- এ বিষয়গুলোতে আগাম তথ্য সংগ্রহ করে তারা সিদ্ধান্ত নেবে যে বাজারে পণ্যের সরবরাহ পর্যাপ্ত রাখতে হলে কি উদ্যোগ নিতে হবে।”

আলু ছাড়াও বাজারে অন্যান্য সবজির দামও বেশ চড়া। বাজার ঘুরে দেখা যায়, কোন সবজির দামই ৫০ টাকার নিচে নয়।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

আধুনিক চক্ষু হাসপাতাল, শমসের নগর রোড, মৌলভীবাজার

© All rights reserved © 2018 News Smart
Develoved by Bongshai IT