ঢাকা   ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
ভারত থেকে আবারও এক হাজার ৯০০ মেট্রিক টন আলু আমদানি ভারতের ট্যুরিস্ট ও বিজনেস ভিসা বন্ধ, বেনাপোল বন্দর দিয়ে যাত্রী পারপার অর্ধেকের নিচে অন্তর্বর্তী সরকারই তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রূপান্তরিত হতে পারে: অ্যাটর্নি জেনারেল মৌলভীবাজার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মৌলভীবাজার স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পন করে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে সর্বস্তরের মানুষের ঢল। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা পুলিশ সদস্য এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সম্মাননা। রাজারবাগ পুলিশ স্মৃতিসৌধে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদন। বর্ণীল আয়োজনে শার্শা প্রশাসনের বিজয় দিবস উদযাপন ভারত থেকে শুল্কমুক্ত চাল আসলেও বাজারে কোনো প্রভাব নেই। যশোরের শার্শায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

ক্ষুর-কাঁচির সংসারে বেড়ে উঠছে ইঞ্জিনিয়ার

নির্মল বার্তা
  • Update Time : সোমবার, অক্টোবর ১৯, ২০২০
  • 140 Time View
মেহের আলী
নওগাঁ জেলার বদলগাছি থানার দাউদপুর গ্রামের মো. মেহের আলী দেওয়ান

সেলুন বলতেই আমরা বুঝি সুন্দর একটা রুমের মাঝে থাকবে এয়ার কন্ডিশন, চারদিকে আয়না, দামি দামি চেয়ার টেবিল এবং আরও নানান রকমের সরঞ্জামাদি। কিন্তু মো. মেহের আলী দেওয়ানের সেলুনটা সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপের, খোলা আকাশের নিচেই।

সেখানে নেই কোনো রুম, নেই কোনো দামি চেয়ার। আপনি চুল কাটবেন কিন্তু নিজেকে দেখতে পারবেন না। কারণ এই সেলুনে কোনো আয়না নেই। বিগত চৌদ্দ-পনেরো বছর ধরে মানুষের চুল কেটে জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি নিজের একমাত্র সন্তানকে ইঞ্জিনিয়ার করে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখে যাচ্ছেন নওগাঁ জেলার বদলগাছি থানার দাউদপুর গ্রামের মো. মেহের আলী দেওয়ান (৭০)।

মোহাম্মদ মেহের আলী দেওয়ান জানান, ২০০৩ সালে অভাবের তাড়নায় দুই বছরের ছেলে মেহেদী হাসানসহ আরও দুই মেয়েকে নিয়ে স্বামী-স্ত্রী চলে এলাম ইট পাথরের এই রাজধানী শহরের মিরপুর বেড়িবাঁধ নবাবের টিনসেট এলাকায়। গ্রামের জীবন যুদ্ধে যখন হেরে গেলাম তখন আবার নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখার জন্য গ্রাম থেকে চলে এলাম রাজধানীতে। এসেই দিশেহারা, কি করে বাঁচবো এবং সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেবো।

প্রথমে বেড়িবাঁধ এলাকায় কৃষিকাজ শুরু করলাম। সারাদিন অন্যের জমিতে হাঁড়ভাঙা পরিশ্রম করে যা রোজগার করছিলাম তাতেও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলাম। শরীরেও আর চাপ নিতে পারছিলাম না।

একদিন এই গাছটির নিচে বসে চিন্তা করছিলাম কি করবো আমি। হঠাৎ মাথায় এলো এই বেড়িবাঁধ এলাকায় অনেক রিকশাওয়ালা ও আমার মতো দিনমজুর থাকে। আমি খুর, কাঁচি নিয়ে এখানেই বসি তবে। আমার মনে হয়, আমি অন্যের চুল কেটে কিছু পয়সা ইনকাম করতে পারব। কারণ আমার দ্বারা আর অন্যের খেতে কাজ করা সম্ভব না। যেমন চিন্তা তেমনি বাস্তবায়ন। ঠিক পরেরদিনই আমি একটি খুর, কাঁচি, চিরুনি ও একখানা ভাঙা চেয়ার যোগাড় করে নিয়ে বসে গেলাম খোলা আকাশের নিচেই চুল কাটার কাজে।

তবুও সংসার চলে না। কি করবো! সর্বোচ্চ ৮০-১০০ টাকার বেশী ইনকাম হয় না। ৫/৬ জন লোকের সংসার চালানো এবং মাস গেলে ৮০০ টাকা ঘর ভাড়া দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। পরে মেয়ে ও মেয়ের মাকে গার্মেন্টসে দিতে বাধ্য হই তারপর আস্তে আস্তে আল্লাহর রহমতে বেঁচে আছি।

মেহের আলীর স্ত্রী হাজেরা বেগম (৫৫) জানান, স্বামীর কষ্ট এবং সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার তাগিদে গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে কাজ নেওয়ার জন্য বহুৎ কষ্টের পরে একটা চাকরি খুঁজে পেলাম। বেতন মাত্র এক হাজার টাকা। তবুও একমাত্র ছেলেকে মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তোলার জন্য সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পোশাক শ্রমিকের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করলাম। তবুও কোন মানুষের কাছে কখনো হাত পাতি নাই।

কোনোভাবে সংসার চালাতে পারলেও সন্তানদেরকে স্কুলে দেওয়ার মতো সামর্থ্য ছিল না। মেয়ে দুইটাকে স্কুলে দিতে না পারলেও ছেলেকে নিয়ে ছিল তার স্বপ্ন। যত কষ্ট হোক, জীবন বাজি রেখে হলেও আমাদের এই একমাত্র ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে গড়ে তোলার জন্য জীবন প্রাণ দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাব। ইনশাআল্লাহ।

এই চিন্তা করেই ছয় বছর বয়সে মিরপুর নবাব বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করেন মেহেদী হাসানকে। তারপর মিরপুর-২ নম্বর জার্মান টেকনিক্যাল থেকে ১৬/১৭ সালে এসএসসি পাস করে তারপর ঢাকার তেজগাঁও পলিটেকনিক্যাল কলেজে (আর এ সি) রিফ্রিজারেশন ও এয়ারকন্ডিশন ফোর সেমিস্টারে পড়ালেখা করছেন আমাদেন একমাত্র সন্তান।

মো. মেহেদী হাসান (১৯) জানান, আমার বাবা মিরপুর বেড়িবাঁধে খোলা আকাশের নিচে বসে নাপিতের কাজ করেন তাতে আমার কোনো দুঃখ নাই।

আমি সবার সঙ্গে গর্ব করে বলি যে, আমার বাবা চুল কেটে আমাকে মানুষের মত মানুষ করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আমার মা ও বোন গার্মেন্টসে চাকরি করেন আর আমি ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করছি। আমার বাবা-মার হাড়ভাঙা পরিশ্রম ও আল্লাহর রহমত ছাড়া কোনোভাবেই তা সম্ভব ছিলনা। কারণ আমার স্কুল জীবনে এমনও দিন গেছে, পরনের কাপড় ছিলনা। পেটে ভাত ছিল না। স্কুলের বেতন দিতে পারি নাই।

স্কুল জীবনে পরীক্ষার হল থেকে আমাকে বাইরে দাঁড়িয়ে রাখা হয়েছিল পরীক্ষার ফি দিতে না পারার কারণে। পরে বাসায় গিয়ে সুদে টাকা এনে আমি স্কুলের পরীক্ষার ফি দিয়ে তারপর পরীক্ষা হলে গিয়ে পরীক্ষা দিয়েছি।

আমি এসএসসি পাস করেছি। বাবা ও মার কষ্ট এবং টাকার যে কষ্ট কি তা আমি বুঝতে পেরেছি এবং আমি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছি, আমাকে জীবনে বেঁচে থাকতে হলে মানুষের মতো মানুষ হতে হবে এবং মা বাবার স্বপ্ন পূরণে আমাকে ইঞ্জিনিয়ার হতেই হবে। তার জন্য আমি বাসে করে প্রতিদিন কলেজে যাই। যেদিন যাওয়ার টাকা থাকে না সেদিন ফার্মগেট থেকে হেঁটে তেজগাঁওতে পলিটেকনিক কলেজে যাই এবং ক্লাস করি।

এমনও দিন আছে আমি মিরপুরে পায়ে হেঁটে চলে আসি। আজ পর্যন্ত আমার মা-বাবা আমাকে একটা ভালো জুতা ভালো কাপড় কিনে দিতে পারেনি। তাতে আমার কোন দুঃখ নেই। আমি কলেজের পোশাক ছাড়া অন্য ভালো কোনো কাপড় নিজেও পরতে পারিনি। আবার বাবা-মা কেউ পরতে দেখিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে মেহেদি হাসান বলেন, এত কষ্টের পরেও আমি কারও কাছে কখনো হাত পাতিনি। আমার বাবা-মাও পাতেনি। আমি কারও কাছে কোনো সহযোগিতাও চাইনা। সবার কাছে শুধু দোয়া চাই, আমি যেন আমার বাবা মার স্বপ্ন পূরণ করে তাদের মুখে হাসি ফোটাতে পারি। ইনশাআল্লাহ।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

আধুনিক চক্ষু হাসপাতাল, শমসের নগর রোড, মৌলভীবাজার

© All rights reserved © 2018 News Smart
Develoved by Bongshai IT