দেশের সবচেয়ে বড় মেগাপ্রকল্প পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে দুর্বার গতিতে। এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে সেতুর সোয়া ৫ কিলোমিটার বা ৫ হাজার ২৫০ মিটার অংশ।
শনিবার মাওয়া প্রান্তের ৮ ও ৯ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয়েছে ৩৫তম স্প্যান। আর মাত্র ৬টি স্প্যান বাকি। এগুলো বসলেই দৃশ্যমান হবে স্বপ্নের পদ্মাসেতুর পুরো অবকাঠামো অর্থাৎ ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ৪০ দিনের মধ্যে দেখা যাবে পদ্মাসেতুর পুরো অবকাঠামো অর্থাৎ, ডিসেম্বরের ১০ তারিখের মধ্যেই শেষ হবে বাকি স্প্যানগুলো বসানোর কাজ।
আর পুরো সেতুর কাজ শেষ হতে পারে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে। পদ্মাসেতুর মূল কাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে। ৬ হাজার ১৫০ মিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা।
পদ্মাসেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের বলেন, নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ৩৫তম স্প্যানটি শুক্রবার বসানোর কথা ছিল। কিন্তু পদ্মা নদীতে নাব্যতা সংকটের কারণে ওইদিন স্প্যানটি বসানো সম্ভব হয়নি।
শনিবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার কুমারভোগ এলাকার মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের স্টিল ট্রাস জেটি থেকে সেতুর ৮ ও ৯ নম্বর পিলারের কাছে নেয়া হয় ৩৫তম স্প্যান। দুপুর ২টা ৪৩ মিনিটে স্প্যানটি পিলারের ওপর সফলভাবে বসানো হয়।
তিনি আরো বলেন, ৩৪তম স্প্যান বসানোর এক সপ্তাহের মধ্যেই ৩৫তম স্প্যান বসানো হয়েছে। আর মাত্র ছয়টি স্প্যান বাকি। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী এগুলো বসাতে পারলে ডিসেম্বরের ১০ তারিখের মধ্যেই পদ্মাসেতুর পুরো অবকাঠামো দৃশ্যমান হবে।
৪ নভেম্বর ২ ও ৩ নম্বর পিলারে বসবে ৩৬তম স্প্যান, ১১ নভেম্বর ৯ ও ১০ নম্বর পিলারে ৩৭তম স্প্যান, ১৬ নভেম্বর ১ ও ২ নম্বর পিলারে ৩৮তম স্প্যান, ২৩ নভেম্বর ১০ ও ১১ নম্বর পিলারে ৩৯তম স্প্যান, ২ ডিসেম্বর পিয়ার ১১ ও ১২ নম্বর পিলারে ৪০তম স্প্যান এবং ১০ ডিসেম্বর ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের ওপর বসবে সর্বশেষ ৪১তম স্প্যান।
নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, সংশোধিত সময় অনুযায়ী ২০২১ সালের জুনের মধ্যে পদ্মাসেতুর কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রোডওয়ে ও রেলওয়ে স্ল্যাব বসানোর কাজ দ্রুত চলছে। এ পর্যন্ত দুই হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে বসানো হয়েছে এক হাজার ১৬৬টি।
দুই হাজার ৯৬৯টি রেলওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে বসানো হয়েছে এক হাজার ৬৪৬টি। এছাড়া মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে ভায়াডাক্টের ৪৮৪টি সুপারগার্ডারের মধ্যে বসানো হয়েছে ২৫৮টি।
দেশের সবচেয়ে বড় মেগাপ্রকল্প পদ্মাসেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সেতুর জাজিরা প্রান্তে ৩৭-৩৮ নম্বর পিলারে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে সেতু দৃশ্যমান হয়। চলতি বছরের ৩০ মে পর্যন্ত জাজিরা প্রান্তে ২৮টি স্প্যান বসানো হয়। এরপর শুরু হয় মাওয়া প্রান্তে স্প্যান বসানোর কাজ।
পদ্মাসেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণে কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন।