চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিলের দিকে যখন সারা দেশ প্রাণঘাতী করোনায় আতঙ্কিত, তখনই লকডাউনের কবলে পুরো বাংলাদেশ। ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে মানুষ। এতে করে কপালে চিন্তার ভাঁজ পরে গ্রামীণ জনপদের নিন্ম আয়ের পরিবারগুলোতে।
বিশেষ করে মৌলভীবাজার শহর ও আশপাশের গ্রামে এর প্রভাব কিছুটা আঁচ করতে পেরেছি স্বচক্ষে। সাধারণ নিম্ন আয়ের মানুষগুলো করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, কারন কাজ-কর্ম বন্ধ।
এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে এগিয়ে আসে সরকারি-বেসরকারী নানা উদ্যেগের পাশাপাশি প্রবাসীসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন গুলো। ব্যক্তি উদ্যেগেও অনেকে নিম্ন আয়ের ঘরবন্দী অসহায় মানুষের মুখে খাবার তুলে দিয়েছেন। যে যার মত করে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। বিশেষ করে করোনা আতঙ্কের সময়ে সাধারণ মানুষের পাশে পুলিশের অনন্য মানবিক ভুমিকা প্রশংসা দাবিদার নিঃস্বন্দেহে।
করোনার এমন ক্লান্তিলগ্ন মুহুর্তে গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে ঝুঁকি নিয়ে দিনের বেলা কাজ অব্যাহত থাকলেও রাতের বেলা বেশিরভাগ সময়ে বাড়িতেই কেটেছে। এমন সময়ে রাতে বেশ কয়েকদিন আমার মোবাইল ফোনে রিং বেজে উঠতেই দেখি পুলিশ কর্মকর্তা ও মৌলভীবাজার মডেল থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) প্রিয় পরিমলদার ফোন, রিসিভ করতে প্রশ্ন কোথায় আছি।
প্রশ্নের উত্তরে বাড়িতে আছি বলার কিছুক্ষণ পরই রাতের আঁধারে বাড়িতে এসে ফোর্স নিয়ে হাজির মানবিক পুলিশ কর্মকর্তা পরিমলদা। চুপিসারে জানতে চাইলেন আপনার এলাকায় কার ঘরে খাবার নেই? এমন কয়েকটা পরিবারের সন্ধান দেন। বললাম দাদা খবর নিয়ে দেখি। বাড়ির পাশে দাঁড়ানো পুলিশ ভ্যান দেখে অনেকে ভয়ে আতঙ্কিত মনে হয়েছে, কেউ কেউ জানতেও চেয়েছেন পুলিশ কেন এসেছে । যখন বললাম পুলিশ গরীবের ঘরে খাবার তুলে দিতে এসেছে তখন অবাক!
যাক, তো বেশ কয়েকটি নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্ধান দিতেই আমাকে নিয়ে সোজা হাজির ওইসব পরিবারে। দরজা বন্ধ, পরিমালদা নিজেই পরিবারের কর্তাকে উদ্দেশ্য করে ডাকছেন। এমন সময়ে ঘরের দরজা খুলতেই আগ বাড়িয়ে নিজের পরিচয় দিয়েই চাল,ডাল,আলু,লবন,তৈলসহ নিত্যপণ্যের একটি ব্যাগ তুলে দিয়ে বলছেন এটি পুলিশের পক্ষ থেকে আপনার জন্য সামান্য উপহার।
পুলিশের এমন মানবিক ভুমিকায় সেদিন আমি নিজ চোখে জল পড়তে দেখেছি প্যাকেট পাওয়া কয়েকজন স্বামীহারা গৃহবধূকে। মুহুর্তগুলো স্মৃতিমন্থর করে রাখতে ছবি তুলতে চাইলেও পরিমলদার সোজা কথা ছবি তোলা যাবেনা। এমনকি সেদিনে পুলিশের এমন মানবিক কর্মগুলো নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করার ইচ্ছে ছিলো, কিন্তু পারিনি দাদার জন্য।
আপনার মানবিক গুণগুলো সেদিন নিজ চোখে না দেখলে বুঝতেই পারতামনা আপনার মানবিকতার শেকড় কতটা গভীরে। ভাল থাকুন প্রিয় পরিমল দা,শুভ জনমদিন।
লেখক: আব্দুল কাইয়ুম, সিনিয়র সাংবাদিক, মৌলভীবাজার